শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দেশের সরকারি কলেজগুলোতে যেন অনিয়মের শেষ নেই। তারই ধারাবাহিকতায় ভুয়া ভাউচারে অর্থ ব্যয়সহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম লক্ষ্য করা গেছে পাংশা সরকারি কলেজে।
এর মধ্যে সাতটি গুরুতর আর্থিক অনিয়ম (এসএফআই) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গুরুতর আর্থিক এসব অনিয়মের জবাব জানতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়েছে শিক্ষা অডিট অধিদফতর। অধিদফতরের উপ-পরিচালক শাকিলা জামান স্বাক্ষরিত এ চিঠি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া শিক্ষা অডিট অধিদফতরের নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ হয় ২৮ ডিসেম্বর।
নিরীক্ষা পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ববর্তী অডিট আপত্তির ব্যবস্থা না হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আইন না মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটি দ্রুত বন্ধ হওয়া উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ দুর্বলতা, সরকারি বিধান পালন না করায় অনিয়মগুলো সংঘটিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পাংশা সরকারি কলেজে নিরীক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে ৯ কোটি ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫২০ টাকার অডিট আপত্তি তুলেছে শিক্ষা ও অডিট অধিদফতর।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের জন্য সরকার নির্ধারিত বাসা বরাদ্দ দিয়ে থাকে। নিয়ম অনুযায়ী সেখানেই অধ্যক্ষদের বসবাস করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সরকারি বাসা থাকা সত্ত্বেও পাংশা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বাসা ভাড়া গ্রহণ করছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পাবলিক ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০১ থেকে ১ হাজার হলে ৫ শতাংশ এবং পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজারের বেশি হলে ১০ শতাংশ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করতে হবে। কিন্তু পাংশা সরকারি কলেজ সরকারের এ বিধান মানেনি। এসব টাকা আদায় করে সরকারের কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
রাজবাড়ীর পাংশা সরকারি কলেজের ২০২০-২১ অর্থবছরের নিরীক্ষায় বিভিন্ন খাতের খরচ রাজস্ব এবং কলেজ তহবিল উভয় খাতে দেখানোয় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৯৭ লাখ ৪৩ হাজার ১০০ টাকা। এ ঘটনায় দায়ী কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে এসব টাকা আদায় করে সরকারের কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে। কলেজটির জাতীয়করণকৃত শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন নির্ধারণের আগে কলেজ তহবিল গৃহীত টাকা ফেরত বা সমন্বয় না করে বকেয়া বেতন-ভাতা বাবদ অতিরিক্ত গ্রহণ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ২৬০ টাকা। এই কলেজটি এমপিও কলেজ ও কর্মচারীদের নিয়ম বহির্ভূতভাবে আত্তীকরণ করে বেতন নির্ধারণ করে নিয়মিত বেতন পরিশোধ করে আসছিল। এ জন্য সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৮৫ হাজার ৩০৭ টাকা। কলেজটি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাতে আদায়কৃত টাকার মধ্যে ব্যাংক হিসাবে কম জমা করায় আর্থিক অনিয়ম করেছে ২ কোটি ৫৯ লাখ ৫৬ হাজার ৪৫ টাকা।
শিক্ষা অডিট অধিদফতর বলছে, এসব ঘটনায় দায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত এ কলেজের অধ্যক্ষ ঢাকায় যাতায়াত দেখিয়ে ভ্রমণ আদেশ ছাড়াই কলেজ তহবিল থেকে ৭৯ লাখ ৭ হাজার ৮০৮ টাকা উত্তোলন করেছেন, যা জেনারেল ফিন্যান্সিয়াল রুলসের লঙ্ঘন।
শিক্ষা অডিট অধিদফতরের পরিচালক মোহাম্মদ আমীমূল এহসান কবীর গণমাধ্যমে এ প্রসঙ্গে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন আর্থিক অনিয়ম কাম্য নয়। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এই অনিয়মগুলো চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়ের কাছে জবাব জানতে চাওয়া হয়েছে।
এমন অনিয়মের ব্যাপারে পাংশা সরকারি কলেজের বর্তমান দায়িত্বে থাকা অধ্যক্ষ হোসনেয়ারা খাতুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি অডিট অধিদফতরের নিরীক্ষা কার্যক্রমে উঠে আসা উল্লেখিত অনিয়মের কিছু বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করে।