আয়শা রিপা (৯) ও রিফাত হোসেন (১০)। তারা দুজন আপন ভাইবোন। রিপা রবগুনা সদর উপজেলার ৭নং ইউনিয়নের লেমুয়া খাজুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী। এবং তার ভাই রিফাত একই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী। বর্তমানে তারা পটুয়াখালীর কলাপাড়া হাসপাতালে মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি মুমুর্ষ মায়ের দিকে চেয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে।
মায়ের একটু সুস্থতার তার পাশে বসেই অজ্ঞান মায়ের হাত পা টিপে দিচ্ছেন। কিন্তু যন্ত্রনাসিক্ত মা সন্তানদের ডাকে সাড়া দিতেও পারছেন না। এ গৃহবধুর সারা শশীরে ফুলা যখমের চিহ্ন রয়েছে। রোববার সকালে হাসপাতালে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে উপস্থিত অনেকেই
অশ্রæসিক্ত হয়েছেন। কথা হলে মুমূর্ষ ওই নারীর স্বজনেরা জানান, শুক্রবার
দুপুরে বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নং ইউপির লেমুয়া গ্রামের বাড়িতে বসে তাদের
চোখের সামনে মা রশোনা বেগমকে তার ফুফু ও ফুফারা অমানবিক নির্যাতন
চালিয়েছেন। এসময় মাকে বাঁচাতে দুই শিশু সন্তান এগিয়ে গেলে তাদেরকেও মারধর
করা হয়। এক পর্যায়ে তার মা নির্যাতন সইতে না পেরে সঙ্গাহীন অবস্থায়
মাটিতে লুটিয়ে পরেন। এর আগে ফুফু ও ফুফারা বাড়িতে ঢুকেই তার বাবাকে গাছের
সঙ্গে বেঁধে ফেলেন। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের বাবা ছাড়া পেয়ে জাতীয়
জরুরী সেবা কেন্দ্রে ৯৯৯ এ ফোন করলে বরগুনা সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে
পৌছে তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেও ফুফু ও ফুফাদের
হুমকিতে তাদের বাবা ফোরকান প্যাদা তার স্ত্রীকে কলাপাড়া হাসপাতালে এনে
ভর্তি করেন। তবে কি কারনে তাদের বাবাকে বেঁেধ মাকে নির্মম নির্যাতন করা
হয়েছে তা বুঝতে না পারলেও এভাবেই কাঁদো কাঁদো কন্ঠে ভয়াবহ নির্যাতনের
কথাগুলো বলেন রিপা ও রিফাত।
ফোরকান প্যাদা জানান, তিনি পেশায় একজন রাজ মিস্ত্রী । কাজ করার সুবাদে
তিনি কলপাড়া উপজেলার পাখিমারা এলাকার শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। এ সুযোগে তার
বড় বোন জামাই সোবাহান মল্লিক ও মেঝ বোন জামাই শহীদুল শিকদার তার স্ত্রী
রশোনা বেগমকে বেশ কয়েকবার শারিরিক সর্ম্পকে লিপ্ত হতে কুপ্রস্তাব
দিয়েছেন। ঘটনার আগের দিন তিনি বাড়িতে ফিরলে তার স্ত্রী বিষয়টি তাকে
জানান। পরে তিনি তাদের বোনদের অবগত করেন। কিন্তু তারা বিষয়টি কোন কর্নপাত
না করে মিথ্যা অপবাদের কথা জানিয়ে শুক্রবার বিকালে উল্টো সন্তানদের
সামনেই স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করেন। এসময় মধ্যযুগীয় কায়দায় তাকে গাছের
সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। তার বড় বোন রিনা বেগম, বোন জামাই সোবাহান, মেঝ বোন
হেনা বেগম, বোন জামাই শহিদুল শিকদার, সেঝ বোন আফসানা বেগম, বোন জামাই
বেল্লাল তালুকদার, ছোট বোন রেকসোনা বেগম, বোন জামাই উজ্জলসহ আরো বেশ
কয়েকজন তার স্ত্রীকে কিল, ঘুষিসহ লাঠি দিয়ে পেটাতে পেটাতে অজ্ঞান করে
ফেলেন। নিজের বোন ও বোন জামাইদের দ্বারা এভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি
হতভম্ব হয়েছেন। কলাপাড়া উপজেলার পাখিমারা গ্রামের রশোনার চাচা নজরুল
ইসলাম জানান, রশোনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে। তিনি
এর বিচার চেয়েছেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত সোবাহান ও বেল্লালের সাথে একাধিকবার
যোগাযোগের চেষ্টা করে হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বরগুনা সদর থানার
ওসি তারিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
কলাপাড়া থানার ওসি মো. জসিম জানান, বিষয়টি তিনি অবগত নন। যেহেতু ঘটনা
বরগুনার মামলাও বরগুনা থানায় হবে। তবে তার কাছে আসলে তিনি আইনী পরামর্শ
দিবেন।