জাতিভেদ প্রথাকে হাতিয়ার করে হিন্দুসমাজকে টুকরো করার যে বিষবৃক্ষ তৈরি করা হয়েছিল, তার মূলে কুঠারাঘাত করতে এগিয়ে এলেন যুগপুরুষ স্বামী প্রণবানন্দ। যিনি ভারতসেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন হিন্দুবাদে বাকি ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীরা সঙ্ঘবদ্ধ ও সুরক্ষিত। কিন্তু হিন্দু জনগণ অরক্ষিত, বিচ্ছিন্ন, ছিন্নভিন্ন, বিবাদমান, দুর্বল। হিন্দুদের জ্ঞানচক্ষু খুলে দেওয়ার তাগিদে স্বামী প্রণবানন্দ বলিষ্ঠ কন্ঠে বলেছিলেন-
“যে যা, তাকে তাই বলে ডাকলে সে সাড়া দেয়। মুসলমানকে মুসলমান বলে ডাক দেওয়া হচ্ছে, তাই সে সাড়া দিচ্ছে। খ্রিষ্টানকে খ্রিষ্টান বলে ডাক দেবার লোক আছে, তাই সে ডাকে সাড়া দিচ্ছে, নিজেদের অস্তিত্বও সেভাবে অনুভব করছে। কিন্তু হিন্দুকে হিন্দু বলে ডাক দেবার লোক নেই। গত একশ বছর ধরে কেউ ডাক দিয়েছে-‘ব্রাহ্ম’বলে, কেউ ডেকেছে ‘আর্য্য’ বলে, কেউ ডেকেছে‘ভারতীয় জাতি’বলে, কোন পক্ষ তাকে আখ্যা দিয়ে রেখেছে অমুসলমান। বিরাট ভারতীয় জাতটা অসাড়, অবশ হয়ে আত্মভোলা হয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। আজ সময় এসেছে হিন্দুকে হিন্দু বলে ডাক দেবার।”
স্বামী প্রণবানন্দ দ্ব্যর্থহীণ ভাষায় বলেছেন-“ প্রত্যেক হিন্দু পরিবারকে শাস্ত্র, সদাচার ও হিন্দু ধর্মের অনুশাসন মেনে চলতে হবে প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে, ব্যক্তিগত ও সমবেত ভাবে সকলকে নিয়ে সদগুরু ভগবানের উপাসনা ও কীর্তনাদি করতে হবে। হিন্দুত্বের আদর্শে জীবন যাপন করে প্রত্যেককে মনে প্রাণে, আচরণে ব্যবহারে, আহারে বিহারে, পোশাকে পরিচ্ছদে, বাক্যলাপে ও চিন্তা ভাবনা প্রভৃতিতে খাঁটি হিন্দু হতে হবে এবং হিন্দুত্বকে রক্ষার জন্য কঠোরপ্রতিজ্ঞা গ্রহন করতে হবে।”
সংহতি চেতনা জাগাবার জন্যে স্বামী প্রণবানন্দ বলেছিলেন –“হিন্দুর বিদ্যা বুদ্ধি, অর্থ ও সামর্থ আছে, কিন্তু নেই সংহতি শক্তি। এই সংহতি চেতনা জাগিয়ে দিলে হিন্দু আবার জাগ্রত হবে”। আচার্য স্বামীজি বলেছিলেন, ” আমি হিন্দুকে জপ করাব, তবেই তাদের মধ্যে মহাশক্তির সঞ্চার হবে।”
হিন্দু ধর্মের জাগরণের লক্ষ্যে স্বামী প্রণবানন্দ তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন। এবং বহুবিধ কর্মধারার প্রবর্তন করে গেছেন। স্বামী প্রণবানন্দ স্থাপন করলেন হিন্দু মিলন মন্দির। গ্রামে গ্রামান্তরে হিন্দুদের সামাজিক মিলন ক্ষেত্র। স্বামী প্রণবানন্দ বললেন – “আমার মন্দির, কোনও ইট পাথরের মন্দির নয়। ইট পাথর গেঁথে গেঁথে লোকে মন্দির করে, আমি হিন্দুসমাজের খণ্ডবিখণ্ড অঙ্গগুলো, ছিন্নবিছিন্ন অংশগুলিকে গেঁথে বিরাট হিন্দুমিলন মন্দির তৈরি করব। আমার মিলন মন্দির হচ্ছে-হিন্দুর সার্বজনীন মিলনক্ষেত্র।”