বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নিজেদের মেধা, যোগ্যতা, কঠোর পরিশ্রম দিয়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন সনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, চীন ও জাপান ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের দিকেই বেশি নজর শিক্ষার্থীদের। হাজারো ছাত্রছাত্রীদের মতই বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশায় কানাডায় পাড়ি জমান মুসা আকরাম হৃদয়। লক্ষ্য স্থির রেখে প্রবল আগ্রহ ও ইচ্ছাশক্তি নিয়ে ছুটে চলা মুসা এখন স্বপ্ন পূরণের দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে।
মুসা আকরাম হৃদয়ের জন্ম ঢাকায় তবে তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম। যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ,ঢাকা থেকে ম্যাট্রিক ও সরকারি বিজ্ঞান কলেজ,ঢাকা থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাস করা মুসার ইচ্ছা ছিল দেশের সনামধন্য কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা। সেই ইচ্ছাকে সফল করে ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১৭-২০১৮ সেশনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ভর্তি হলেও আইটি ও কম্পিউটার সম্পর্কিত কাজের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল প্রবল। তাই সিএসই বিভাগে পড়তে না পেরে সিদ্ধান্ত নেয় বিদেশে উচ্চশিক্ষার।
মুসা আকরামের বিদেশে উচ্চশিক্ষার পথটা মোটেও সহজ ছিল না। দেশের বাহিরে পড়ালেখা নিয়ে তাঁর মা-বাবার আগ্রহ না থাকলেও মুসা নিজের প্রবল আগ্রহ, ইচ্ছাশক্তিতে এগিয়ে যেতে থাকে। পাসপোর্ট, আইইএলটিএস কোচিং, আইইএলটিএস পরিক্ষা, এম্বাসি মুখোমুখি হওয়া সহ যাবতীয় সকল খরচের ভার নিজের জমানো টাকা দিয়েই বহন করে। কিন্তু মা-বাবার দোয়া ছাড়া এই পৃথিবীতে অনেক কিছুই সম্ভব না। এতো চেষ্টার পরেও বাতিল হয় মুসার ভিসার আবেদন।
মুসার আবেদন বাতিল হওয়ার তিন দিন পর তাঁর মা-বাবা সম্মতি আসে। সে আবারো আবেদন জমা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তিন দিনের মধ্যে আবেদন জমা দেয়া ছিল কঠিন কাজ। পরবর্তীতে মুসার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই যিনি তাকে অনেক স্নেহ করে ডিএমপি এডিসি ইফতেখারুল ইসলাম তাকে তিন দিনের মধ্যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে সহযোগিতা করে।
পরের আবেদনে ভিসা পেয়ে মুসা আকরাম হৃদয় পাড়ি জমায় কানাডার আলবার্টা প্রদেশে এডমন্টন শহরে৷ সেখানে Concordia University of Edmonton এ ভর্তি হন “ইনফরমেশন টেকনলোজি ও সাইবার সিকিউরিটি” বিভাগে। কানাডায় পৌঁছানোর পরে শুরু হয় জীবনের আরো এক কঠিন ধাপ। সেখানের আবহাওয়া যেমন ভিন্ন তেমনি পড়ালেখা ও থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। তাই প্রথম দু’বছর মা-বাবার সাপোর্ট নিয়ে খরচ বহন করলেও মুসা ছাত্র অবস্থায় কখনো জুতার দোকান, কখনো খাবারের দোকান, কখনো ডেলিভারি ম্যান ছাড়াও করেছেন অনেক রকমের পার্ট টাইম জব৷ ক্রমান্বয়ে কাজের ভালো সুযোগ আসে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন অনলাইন প্রজেক্ট নিয়েও কাজের সুযোগ পায়। যেকোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েও কোনোদিন হাল ছাড়েনি সে। নিজের মেধা, যোগ্যতা, আগ্রহ ও কঠোর পরিশ্রম দিয়ে জয় করে সকল প্রতিবন্ধকতা। গত বছর কানাডিয়ান পুলিশে ইন্টার্নশীপ শেষ করে মুসা।
মুসা আকরামের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়া দেড় মাস বাকি থাকতেই সে জব পায় কানাডার আলবার্টা প্রদেশে, যেখানে একমাত্র অয়েল মাইনিং কোম্পানি রয়েছে। সে কোম্পানি থেকে তার বার্ষিক বেতন প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি। তাছাড়াও তাঁর হাতে আছে কিছু ব্যক্তিগত প্রজেক্ট যা থেকে বিপুল পরিমাণ আয় করা সম্ভব।
মুসার মত হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা দিন দিন পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশে। নিজের লক্ষ্য স্থির রেখে, স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশায় সকল সমস্যাকে পেছনে পেলে জীবনকে এগিয়ে নিতে হয়,মুসা যা করতে সম্ভব হয়েছে।
মুসা আকরাম হৃদয় তাঁর এই কঠিন পথ অতিক্রম করা ও সফলতায় পৌঁছানোর অভিজ্ঞতা থেকে স্বপ্নবান শিক্ষার্থীদের বলেন, “প্রথমত, বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা যে বিষয়টা প্রধান প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করে সেটা হলো আইইএলটিএস পরিক্ষা। মূলত ইংরেজি বিষয়ে ব্যাসিক ভালো থাকলে আর সেটা নিয়ে প্রত্যেকদিন রুটিনমাফিক অনুশীলন করলে আইইএলটিএস পরিক্ষায় ভালো করা সম্ভব। লক্ষ্য পূরণের জন্য হতে হবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
দ্বিতীয়ত, নিজেকে কঠোর পরিশ্রমী ও উদ্যমী হতে হবে। পরিশ্রম ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব নয়।পরিশেষে বলবো, নিজের জীবনকে সুন্দর করে সাজানোর পরিকল্পনা এবং শৃঙ্খলার সাথে সাথে সত্যতা ও স্বচ্ছতা রেখে এগিয়ে চললে মানুষ অবশ্যই সফলতার দেখা পায়।”