।জাসিম মাহমুদঃ
আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি আসনে প্রার্থীদের সম্পদ গত পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। কোনো কোনো প্রার্থীর সম্পদ বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় প্রার্থীদের নগদ ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির এ চিত্র উঠে এসেছে।
চট্টগ্রামের আসনগুলোয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীতালিকা প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। কেবল নগরীর কোতোয়ালি ও সংলগ্ন এলাকা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৯ আসনে জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলুর পরিবর্তে এবার মনোনীত করা হয়েছে আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে। অন্যদিকে বিএনপি গত নির্বাচনে অংশ না নিলেও এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন দলটির প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামা অনুযায়ী,
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে বিএনপির প্রার্থী কামাল উদ্দিন আহমেদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মীর মোশাররফ হোসেনের সম্পদের পরিমাণ ২০১৪ সালে ছিল ৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকার। এবারের হলফনামায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদ বাড়তি দেখিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মহাজোটের অন্তর্ভুক্ত তরীকত ফেডারেশনের প্রার্থী নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর সম্পদ এবার গতবারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। শেয়ার, বন্ড, ব্যাংকে নগদ অর্থ ছাড়াও তার সম্পদ বেড়েছে স্ত্রীর বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি বাবদ। ২০১৩ সালে ১ কোটি ৩৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৫ টাকার সম্পদ দেখালেও এবার হলফনামায় তার সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৬০ লাখ ২২ হাজার ১৭ টাকা।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মাহফুজুর রহমান মিতার সম্পদ ২০১৩ সালে ছিল ৯ কোটি ৯৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৫২ টাকার। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৭৪ হাজার ৭২২ টাকা।
চট্টগ্রাম-৪ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দিদারুল আলমের সম্পদও বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আগেরবার ১৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও সর্বশেষ হলফনামায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হয়েছে ২৩টি। ২০১৪ সালে ২৫ কোটি ৩৫ লাখ ৫১ হাজার ৭৬১ টাকার সম্পদ দেখালেও এবার তিনি দেখিয়েছেন ৩৯ কোটি ৫১ লাখ ৫২ হাজার ৬৯০ টাকার সম্পদ। এ আসনের বিএনপির প্রার্থী আসলাম চৌধুরী সম্পদ দেখিয়েছেন ২২ কোটি ৯৫ লাখ ১৩ হাজার ৬৩ টাকার। নিজ নামে তার ব্যাংকঋণ দেখানো হয়েছে ৩৪৫ কোটি ৫১ লাখ ৬৩ হাজার ২৬৯ টাকার। আর যৌথ নামে বিএনপির এ প্রার্থীর ব্যাংকঋণের পরিমাণ ১৪৩ কোটি ৩৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে মহাজোট ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সম্পদ বেড়েছে ১২ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার ৯১৩ টাকার। বন্ড ও ঋণপত্রে তার স্ত্রীর বিনিয়োগ বেড়েছে ৮ কোটি ২০ লাখ ১৮ হাজার ৬৬০ টাকা। পাঁচ বছরে তার নগদ বেড়েছে ৯৩ লাখ ৪৪৮ টাকা। এর আগে স্ত্রীর বাড়ি ভাড়ার হিসাব না দেখালেও এবার তিনি সেখান থেকে দেখিয়েছেন ১৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪৮ টাকা।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে সম্পদ বেড়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলে করিম চৌধুরীর। বিগত নির্বাচনের হলফনামায় তার সম্পদ ছিল ৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার ৮৬৮ টাকার। এবারের হিসাব বিবরণীতে তিনি সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৪১ হাজার ৮২৬ টাকার। ভবন ও জমির মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে আগেরবারের চেয়ে ১ কোটি ৬০ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬৪ টাকার সম্পদ বেড়েছে বলে উল্লেখ করেছেন এ সংসদ সদস্য।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাছান মাহমুদের সম্পদের পরিমাণ প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। এবারের হলফনামায় ১ কোটি ২১ লাখ ৯৪৮ টাকা ব্যাংকঋণ দেখিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী) আসনে মহাজোটের প্রার্থী মাঈনুদ্দিন খান বাদলের সম্পদ বেড়েছে প্রায় সোয়া চার গুণ। ২০১৩ সালে হলফনামায় মাত্র ৪৯ লাখ ৫৭ হাজার ৯৬৩ টাকার সম্পদ দেখালেও এবার তিনি দেখিয়েছেন ২ কোটি ৬৬ লাখ ৩৫ হাজার ৩১২ টাকার। এর মধ্যে বিবিধ খাতে ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৩৯০ টাকা, নগদ/ব্যাংক বন্ডে ১ কোটি ৭৪ লাখ ২৩ হাজার ৯২২ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন জাসদের এ নেতা। একই আসনে বিএনপি মনোনীত এম মোরশেদ খানের অস্থাবর সম্পত্তি ৭৯ কোটি ৩৯ লাখ ৪০ হাজার ৭৯৪ টাকার। বিএনপির আরেক প্রার্থী আবু সুফিয়ান সম্পদ দেখিয়েছেন ২ কোটি ৯৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭৯৮ টাকার।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে আওয়ামী লীগের মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল হলফনামায় সম্পদ দেখিয়েছেন ২ কোটি ২০ লাখ ৯৫ হাজার ৬৩০ টাকার। এ আসনে বিএনপির ডা. শাহাদাৎ হোসেন দেখিয়েছেন ৬ কোটি ৪২ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭ টাকার সম্পদ।
নগরীর পাহাড়তলী-হালিশহর নিয়ে
চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত ডা. আফছারুল আমীনের সম্পদের পরিমাণ ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ছিল ৫ কোটি ৪০ লাখ ৩১ হাজার ৩২৯ টাকার। এবারের হলফনামায় তার সম্পদ ৯ কোটি ৯৭ লাখ ৫৪ হাজার ৯৮৪ টাকার। এর মধ্যে স্ত্রীর ব্যাংক জমা বেড়েছে ৭৩ লাখ ৭৯ হাজার ২০ টাকা। এছাড়া বিবিধ খাতে আফছারুল আমীনের সম্পদ বেড়েছে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকার।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর) আসনে আওয়ামী লীগের এমএ লতিফের সম্পদ পাঁচ বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৪ সালে ৮ কোটি ২৯ লাখ ৮২ হাজার ৮২৮ টাকা থাকলেও এবারের সম্পদ বিবরণীতে তিনি দেখিয়েছেন ১৫ কোটি ৬৫ হাজার ১২৬ টাকা।
আর দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত শামসুল হক চৌধুরীর সম্পদ। গতবারের হলফনামায় ২ কোটি ৩৫ লাখ ২২ হাজার ১৯ টাকার সম্পদ দেখালেও এবার তিনি দেখিয়েছেন ৫ কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার ১৮৯ টাকার। এর মধ্যে বাড়ির মূল্য বাবদ ৪৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকার সম্পদ বিবরণীতে যুক্ত করেছেন তিনি। এছাড়াও যানবাহন বাবদ ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ও নগদ বিদেশী মুদ্রা বাবদ ১৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৩৫ টাকার সম্পদ বেড়েছে তার।
পার্শ্ববর্তী আনোয়ারা (চট্টগ্রাম-১৩) এলাকার সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সম্পদ পাঁচ বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা বেড়েছে। বিগত নির্বাচনের হলফনামায় তার সম্পদ ছিল ১৯ কোটি ৫৫ লাখ ১৭ হাজার ৬২৪ টাকার। এবার তিনি সম্পদ দেখিয়েছেন ২৯ কোটি ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৬৮৭ টাকার।
চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের আবু রেজা মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন নদভীর সম্পদ বেড়েছে ১ কোটি ৭ লাখ ৬৫ হাজার ৭৪৯ টাকার। আগেরবার তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৫ লাখ ১৯ হাজার ১১ টাকার। এবার হয়েছে ২ কোটি ১২ লাখ ৮৪ হাজার ৭৬০ টাকার। এর মধ্যে বাস ও ট্রাক ভাড়া বাবদ ৭৮ লাখ টাকা আয় বেড়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুস্তাফিজুর রহমানের সম্পদ আগে ছিল ৬৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার। সর্বশেষ হলফনামা অনুযায়ী তার সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ২২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। গত নির্বাচনের আগে নগদ টাকার পরিমাণ শূন্য থাকলেও এবারের সম্পদ বিবরণীতে নগদ টাকা ৩৫ লাখ ৩০ হাজার ও অকৃষি খাতে ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৪০০ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন তিনি।