ফরিদ উদ্দিন বিপু,কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি,০৪জুলাই।। কলাপাড়ায় স্ত্রী স্বীকৃতির দাবী নিয়ে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করছেন কলেজ পড়–য়া এক শিক্ষার্থী (১৮)। গত মঙ্গলবার থেকে উপজেলার চম্পাপুর ইউপির মাসুয়াখালী বোর্ডস্কুল সংলগ্ন একটি বাড়িতে এখনও পর্যন্ত অবস্থান করছে ওই কিশোরী। স্থানীয়রা জানান, প্রেমিক মিঠুনের বাড়িতে প্রথমে কিশোরী অবস্থান করলেও পরে ওই পরিবারের বাধার মুখে পরে স্থানীয় রাধা মন্দিরের পাশে প্রেমিক মিঠুনের কাকা জয়দেব সিমলাই’র বাড়িতে রেখে যায় স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা। কিশোরীর বাড়ি পাশর্^বর্তী উপজেলা মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী ইউপির বাসন্ডা গ্রামে। ভুক্তভোগী কিশোরী মধুমিতা ( ছদ্দনাম) কান্নাজড়িত কন্ঠে ক্যামেরার সামনে অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ চার বছর আগে পটুয়াখালীর গলাচিপায় তার মামা বাড়িতে গেলে সেখানেই পরিচয় হয় প্রেমিক মিঠুনের সাথে। ধীরে ধীরে গরে ওঠে গভীর প্রেমের সম্পর্ক। এরই মাঝে মধুমিতার অষ্টম শ্রেনীর পরিক্ষা চলাকালীন সময়ে ২০১৮ সালে ২৮ ফেব্রæয়ারী পরীক্ষা সেন্টার বাদুরা হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সামনেই সিঁদুর পরিয়ে দেয় প্রেমিক মিঠুন সিমলাই। এর পর থেকেই স্বামীর দাবী নিয়ে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন স্থানে ডেকে নেয় মিঠুন। মধুমিতা আরো জানান, মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে কুয়াকাটা,পটুয়াখালী সাফারী হোটেল ও বিভিন্ন সময়ে বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে স্বামীর দাবীতে শারিরিক স্থাপনে লিপ্ত থাকত প্রেমিক মিঠুন। তার অভিযোগ হোটেল সাফারীতে একাধিকবার রাত্রি যাপন কালে সকল কাজে মিঠুনকে সহযোগীতা করতো ধানখালী এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। এমনকি ওই শিক্ষকের সাথে কথা বলে তার নামেই হোটেলে রুম বুকিং করত মিঠুন। কান্না জড়িত কন্ঠে মধুমিতা বলেন, টানা ৪ বছরের ভালোবাসার সম্পকের্র মধ্যে ২ বছরে অন্তত শতাধিকবার শারিরিক সম্পর্ক করেছে মিঠুন। লাগাতার মেলামেশায় এরই মাঝে তিনি অন্তঃসত্তা হয়ে পরলে মিঠুনের দিদি তাকে ঘরে তুলে নেয়ার প্রতিশ্রæতি দেন। তবে শর্তজুড়ে দেয়া হয় পেটের সন্তানসহ ঘরে তোলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন দিদির কথা বিশ^াস করে মিঠুনের মাধ্যমে তার পাঠিয়ে দেয়া গর্ভপাতের ওষুধ সেবন করে শয্যাশায়ী হয়ে পরি, মেরে ফেলি নিজ পেটের সন্তান। এর পর থেকেই সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখে মিঠুনসহ তার পরিবার। তিনি আরো বলেন, ফোনে মিঠুনকে না পেয়ে চলতি বছরের এপ্রিলে স্ত্রীর দাবী নিয়ে শ^শুর নিরমল সিমলাইয়ের বাড়িতে চলে আসি। এসময় সনাতন ধর্মানুযায়ী চৈত্র মাসে বিয়ে সম্ভব নয় বলে ফের আমাকে নিজ পিত্রালয়ে রেখে আসেন স্থানীয় মাতব্বরসহ মিঠুনের বড় ভাই জয়ন্ত সিমলাই। একই সময়ে বৈশাখ মাসে বিবাহের দিন তারিখ ধার্য করা হয়। পরবর্তীতে গত ৩০ জুন (মঙ্গলবার) জানতে পারি গোপনে মিঠুনকে অন্যত্র বিয়ে দিচ্ছে তার পরিবার। খবর শুনে ওইদিন মিঠুনের বাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটে আসি এবং মিঠুনকে তার বাড়ির সামনেই ওষুধের দোকানে পেয়ে তার সাথে শ^শুরালয় ফিরি। এসময় বাড়ির সামনে আমাকে রেখে ঘরে ঢুকে পোশাক পরে পালিয়ে যায় মিঠুন। আমি পিছু নিতে চাইলে মিঠুনের দিদি আমাকে শারিরিকভাবে লাঞ্চিত করতে থাকে। এক পর্যায় আমাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তারিয়ে দিতে চাইলে স্থানীয়রা আমার পক্ষ নেয়। এসময় মিঠুনের পরিবার মিঠুনকে ছাড়া বাড়িতে না থাকার শর্ত জুড়ে দিলে স্থানীয়রা পাশর্^বর্তী রাধামন্দীর সংলগ্ন জয়দেব সিমলাইয়ের বাড়িতে আমাকে রেখে যান। মধুমিতা আরো জানান, মিঠুনের স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ওই বাড়িতেই থাকবেন। এদিকে এ কিশোরীর সাথে প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার কারনে মিঠুনের পরিবারের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে স্থানীয়রা।
মিঠুন সিমলাই’র বড় ভাই জয়ন্ত সিমলাই স্বাত্যতা স্বীকার করে বলেন, তার ভাই মিঠুনের সাথে মেয়েটির সম্পর্ক আছে, এর আগেও একবার সে তাদের বাড়িতে এসেছিল। তখন গ্রামের লোকজন মিলে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মিঠুনকে খুজে পাওযা যাচ্ছে না। খুজে পেলেই ওদের বিয়ে দেয়া হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রবিন হাওলাদার জানান, বিষয়টি কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তবে মিঠুন সিমলাই বিষয়টি অন্যায় করেছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
চম্পাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.রিন্টু তালুকদার জানান,ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ ঘটনা আমি শুনেছি তবে কেই অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এই বিভাগের আরও খবর....