একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য হলেন যারাঃ
জসিম মাহমুদঃ————
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগ্রহী ৩ হাজার ৬৫ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র(আজ রবিবার) যাচাই করা হয়। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই চলে সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। পরে বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করবে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়।
এরইমধ্যে আদালত কর্তৃক দণ্ড, ঋণখেলাপসহ নানা অনিয়মে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হেভিওয়েট বেশ কয়েকজন নেতার মনোনয়নপত্র অবৈধ বলে বাতিল করা হয়েছে। তারা হলেন-
খালেদা জিয়াঃ
দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় ফেনী-১ (ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মো. ওয়াহিদুজ্জামান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জমা দেয়া মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন আজ সকালে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্রটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।
এদিকে বগুড়া-৬ আসনে কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বগুড়া-৬ আসনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে বগুড়া-৭ আসনেও খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।
রুহুল আমিন হাওলাদারঃ পটুয়াখালী-১ (সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকি উপজেলা) আসনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী এ মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, রুহুল আমিন হাওয়ালাদের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগ থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
কাদের সিদ্দিকীঃ
ঋণ খেলাপি হওয়ায় টাঙ্গাইল-৪ ও ৮ আসনের প্রার্থী বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। টাঙ্গাইল-৮ আসনে প্রার্থী হয়েছেন কাদের সিদ্দিকীর মেয়ে কুড়ি সিদ্দিকীও।
রেজা কিবরিয়াঃ
ক্রেডিট কার্ডের বিল না দেওয়ায় হবিগঞ্জ-১ আসনে গণফোরামের প্রার্থী রেজা কিবরিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এ ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার। রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে।
রুহুল কুদ্দুস তালুকদারঃ
দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের দুই মামলায় সাজা হওয়ায় নাটোর-২ আসনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে বিএনপির রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর।
আফরোজা আব্বাসঃ
ঢাকা-৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা আব্বাসের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কে এম আলী আজম। আজ রোববার বিকেলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কে এম আলী আজম জানান, ঋণখেলাপির অভিযোগে বিএনপি প্রার্থী আফরোজা আব্বাসের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর আগে তার মনোনয়নপত্র স্থগিত করে রাখা হয়েছিল।
ইমরান এইচ সরকারঃ
কুড়িগ্রাম-৪ আসন (রাজিবপুর,রৌমারী ও চিলমারী উপজেলা) থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন তার মনোনয়নপত্র বাতিল বলে ঘোষণা করেন।
নির্বাচন কমিশন বলছে, ইমরানের মনোনয়নপত্রে সংখ্যা নির্দিষ্ট সংখ্যক জনসমর্থনের তথ্য জমা না দেওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে ইমবান তিন দিনের মধ্যে এর বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন।
গোলাম মাওলা রনিঃ
হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় সদ্য বিএনপিতে যোগ দেয়া গোলাম মাওলা রনির মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আজ রোববার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর এই ঘোষণা দেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মতিউল ইসলাম চৌধুরী। রনি পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা-গলাচিপা) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
খোকাপুত্র ইশরাক হোসেনঃ ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
হিরো আলমঃ
আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলমের বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। ভুয়া ভোটারদের তালিকা জমা দেওয়ায় উপজেলা নির্বাচন অফিসার আশরাফ হোসেন তার মনোনয়ন বাতিল করেন।
আকতারুজ্জামানঃ
কিশোরগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী (অব.) মেজর আকতারুজ্জামানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
গিয়াস কাদের চৌধুরীঃ
ঋণখেলাপী হওয়ায় চট্টগ্রাম-২ আসনে যুদ্ধাপরাধে ফাঁসির দড়িতে ঝোলা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে।
সামির কাদের চৌধুরীঃ
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে বিএনপির নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে সামির কাদের চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তাকেও ঋণখেলাপের কারণে নির্বাচনে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আমিনুর হক ও শাহাদাত হোসেনঃ
রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির দুই প্রার্থী ব্যারিস্টার আমিনুর হক ও শাহাদাত হোসেনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
জাকির হোসেনঃ
তথ্য গোপনের অভিযোগে কুড়িগ্রাম-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাকির হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
আবু আশফাকঃ
ঢাকা-১ আসনে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদে থাকায় বিএনপি নেতা আবু আশফাকের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। ফাহিমা হোসেন জুবিলীর মনোনয়নপত্রে বিএনপি মহাসচিবের স্বাক্ষর না মেলার অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর ফলে ঢাকা-১ আসনে বিএনপির ২ প্রার্থীই বাতিল।
আমানউল্লাহ আমানঃ
ঢাকা-২ আসনের দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড পাওয়ায় বিএনপি প্রার্থী আমানউল্লাহ আমানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
ঢাকা-৪ এ ছয় জনঃ
এই আসনে ১৫ প্রার্থীর মধ্যে ৬ জনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। ঋণ খেলাপিসহ মনোনয়নপত্র দাখিলে ত্রুটি থাকায় ঢাকা ৪ আসনে প্রার্থিতা বাতিল হওয়া ৬ জন হলেন,খেলাফত আন্দোলনের আবদুল মালেক, বিকল্পধারার কবির হোসেন, নজরুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, আওলাদ হোসেন ও মনির হোসেন।
সেলিম ভূঁইয়াঃ
ঢাকা-৫ আসনে ঋণ খেলাপির অভিযোগে বিএনপি প্রার্থী সেলিম ভূঁইয়ার প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে।
নাসিমা আক্তার কল্পনাঃ
ঢাকা-৭ আসনে বিএনপি প্রার্থী নাসিরউদ্দিন পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা সোনালী ব্যাংকে ঋণখেলাপি হওয়ায় তার প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। দলীয় প্রত্যয়নপত্র না থাকায় নাজমুল হক আওয়ামী লীগের নাজমুল হকের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
কফিলউদ্দিনঃ
ঢাকা-১৯ আসনে মোট ১২ প্রার্থীর মধ্যে প্রার্থিতা গৃহীত ১০ জনের,করখেলাপির অভিযোগে বিএনপির কফিলউদ্দিনসহ মনোনয়ন বাতিল ২ জনের।
খন্দকার ফরিদুল আলমঃ
ঢাকা ১০ আসনে ঋণখেলাপের অভিযোগে গণফোরামের খন্দকার ফরিদুল আলমের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
তমিজউদ্দিনঃ
ঢাকা-২০ আসনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের গৃহীত কপি না থাকায় বিএনপির মো. তমিজউদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঋণ খেলাপি ও আয়কর না দেয়ার দায়ে বিএনপির সুলতানা আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
আগামী ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাতিল হওয়া প্রার্থীরা আপিল করতে পারবেন। আর আপিল শুনানি হবে ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর।