♦জসিম মাহমুদ♦
সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবৈধভাবে বসবাসকারী অভিবাসীদের বৈধ হতে দ্বিতীয় দফায় সাধারণ ক্ষমার সময় বৃদ্ধি করেছে দেশটির প্রশাসনিক দফতর। ৪৭তম জাতীয় দিবসের ‘উপহার’ হিসেবে অবৈধ প্রবাসীদের জন্য এই সময় বাড়ানো হয়েছে বলে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে পাঁচ মাসে ঠেকেছে সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ।
নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ায় দু’দিন আগেও প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। পাসপোর্ট হাতে না পাওয়ায় স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কায় কিছু বাংলাদেশি প্রবাসীর কান্নায় ভারী হচ্ছিল আমিরাতের বাতাস। দুবাই কনস্যুলেটের বারান্দায় হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন একজন পাসপোর্টপ্রত্যাশী প্রবাসী। চোখের জলে ভেসে যেতে থাকে তার ‘বৈধ’ হবার স্বপ্ন। কাঙ্খিত পাসপোর্ট আটকে আছে ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে। চোখে মুখে তার হতাশা। স্বপ্ন পূরণে একবুক আশায় বুক বেঁধে ছিলেন তিনি।
তার মতো আরেকজনের কান্নাও দাগ কাটে প্রবাসীদের হৃদয়ে। দুই সন্তানের এক জননী। নিজের আয়ের অর্থে চলে সংসার, সেই পয়সায় খেয়ে-পরে বড় হচ্ছে দুই সন্তান। অবৈধ অবস্থায় পালিয়ে বাঁচিয়ে কাজ করার চেয়ে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে বৈধ হতে ছুটে এসেছিলেন দুবাই কনস্যুলেটে। যাবতীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করেছিলেন পাসপোর্টের। প্রত্যাশা ছিল পাসপোর্ট হাতে নিয়েই ৬ মাসের জব সিকার ভিসা নেবেন, এরপর খুঁজবেন বৈধতার জন্যে কাজের ভিসা। অথচ তারও ভাগ্যে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। পুলিশ ভেরিফিকেশন ও ডেম্যু জটিলতায় আটকে যায় কাঙ্খিত পাসপোর্ট। এমন করে প্রায় সাত শতাধিক পাসপোর্ট আটকা পড়ে দেশে। শেষ হয়ে যায় সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ, শেষ হয় ৬ মাসের জব সিকার ভিসার আবেদনের সুযোগও। মেয়াদ শেষের ঠিক তিন দিনের মাথায় হঠাৎ তাদের জন্যে সুখবরের বার্তা প্রকাশ হলো ।
আবারও বাড়লো সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ। এবার সময় বৃদ্ধি করা হলো ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অবৈধ প্রবাসীদের বৈধতা দিয়ে মুখে হাসি ফোটাতে চায় দেশটির সরকার। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বস্তি নামে প্রবাসীদের মাঝে। খুশিতে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন সাধারণ ক্ষমার সুযোগপ্রত্যাশী প্রবাসীরা।
সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সংযুক্ত আমিরাতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ডা. মুহাম্মদ ইমরান বলেন, ‘জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিশেষ বিবেচনায় সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার আবারও সময় বৃদ্ধি করেছে। যাদের পাসপোর্ট দূতাবাসে আছে, দূতাবাস চেষ্টা করছে পাসপোর্টগুলো তাদের হাতে তুলে দেওয়ার। এছাড়া যাদের পাসপোর্ট আটকে আছে, সেগুলোও দ্রুত চলে আসবে।’ বৈধতা ছাড়া আমিরাতে অবস্থানের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যারা কোনও কারণে বৈধ ভিসা পাবেন না, তারা আউট পাস নিয়ে দেশে ফিরে গিয়ে নতুন করে প্রবাসে আসার চেষ্টা করতে পারবেন’।
উল্লেখ্য, ১ আগস্ট থেকে প্রথমে ৯০ দিনের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে প্রথম পর্যায়ে একমাস এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও এক মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়। এই সময়ের মধ্যে আমিরাতে অবস্থানরত অবৈধ প্রবাসীরা যেমন বৈধতার সুযোগ পাবেন। তেমনি চাইলে দূতাবাস ও কনস্যুলেটের মাধ্যমে জেল জরিমানা ছাড়া আউট পার্মিট নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতেও পারবেন।