গত ১৩ অক্টোবর ২০২১ (বুধবার) সাভার উপজেলার নির্বাহী অফিসার সাভার মডেল কলেজের মধ্যম সারির প্রভাষক জনাব মোহাম্মদ হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে একটি চিঠি প্রদান করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড- ঢাকার কলেজ পরিদর্শক এর স্বাক্ষরিত এক চিঠির (স্মারক নং- ১১১/ক/ স্বী/৯৬(অংশ-১)/১৭৪) বরাতে তিনি এ কাজ করেন। সূত্রমতে জানা যায় বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশক্রমে কলেজ পরিদর্শক ইউএনও মহোদয়কে এই মর্মে পত্র দেন যে, সাভার মডেল কলেজের অধ্যক্ষের নিয়োগ বিধি সম্মত হয়নি এবং কলেজে বর্তমানে কোন গর্ভনিং বডিও নেই। এই প্রেক্ষিতে কলেজের দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য দায়িত্ব দেয়ার জন্য জ্যেষ্ঠতম এমপিও শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া।
উক্ত পত্র পেয়ে ইউএনও মহোদয় জ্যেষ্ঠতম এমপিও শিক্ষক না হলেও মোহাম্মদ হোসেন রানাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে কলেজের ব্যাংক হিসাব পরিচালনা ও সকল প্রকার আর্থিক লেনদেন ইউএনও মহোদয় ও ভারাপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন এর যৌথ স্বাক্ষরে কাজ করার নির্দেশ জারি করেও সফল হননি। কেননা জনাব মো. তৌহিদ হোসেন এখনও অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। মোহাম্মদ হোসেন রানা কলেজের জ্যেষ্ঠতম এমপিও শিক্ষক নন এবং কলেজে তার কোন গ্রহণ যোগ্যতা নেই। যার প্রমাণ পাওয়া যায় এ নির্দেশ কার্যকর করার ঘোষণা দানের জন্য ইউএনও মহোদয় কলেজে গেলে কলেজের ৫৮জন শিক্ষক-কর্মচারিকে হাজির থাকর নির্দেশ দিলেও মাত্র ৯জনকে উপস্থিত পান। এতে বিব্রত হয়ে তিনি মাত্র কয়েক মিনিট কলেজে অবস্থান করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। চিঠির বিষয়ে অধ্যক্ষ মো. তৌহিদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান কলেজ পরিদর্শকের চিঠিতে উল্লেখ করা দুটো তথ্যই ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। বাস্তবতার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় ঘটনার মূল কারণ অনেক আগের। কলেজের তৎকালীন ইসলামী শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক রমজান আলীর বিরুদ্ধে জনৈক ছাত্র তাকে জোরপূর্বক বলৎকার করার চেষ্টার লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে গর্ভনিং বডির পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগের বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। তদন্ত কমিটি উক্ত অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে এ রকম একাধিক ঘটনার প্রমাণ পান। পরষ্পরে তদন্তের কথা জানতে পেরে একাধিক ভুক্তভোগী ছাত্র স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত কমেটির কাছে তাদের সাথে ঘটে যাওয় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিচার দাবী করে। তদন্ত কমিটির তদন্তে অপরাধের প্রমাণ পেয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করে। উক্ত সুপারিশের ভিত্তিতে গভর্নিং বডি বিধি মোতাবেক রমজান আলীকে সাময়িক বহিষ্কার করে শিক্ষাবোর্ডে পত্র প্রেরণ করে।
কলেজ পরিদর্শক কর্তৃক প্রেরিত চিঠি শিক্ষককূলের কলঙ্ক রমজান আলী ও তার সহযোগী দোসর মোহাম্মদ হোসেন এর প্রতারণারই ফল। আইনগতভাবে যার কোন ন্যূনতম ভিত্তিও নেই। অধ্যক্ষ মহোদয় তার নিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন ১৬/০১/১৯৯৬(ইং) তারিখের শা:৬/১জি-১/৮৭/১৩৩৭ নং পরিপত্র বলেই তিনি সম্পূর্ণ বৈধ ভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এবং তাঁর নিয়োগ বৈধ ছিল বলেই তিনি ২০০৪ সালে কলেজ এমপিও-ভুক্ত হলেও তিনিও যথারীতি এমপিও পাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতায় তাঁর কোন ঘাটতি ছিল না। কলেজ গভর্নিং বডির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাভার মডেল কলেজ সাভার ট্রাস্ট পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি গঠেনের ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা ২০০৯ এর ৪৮ এবং ৪৯নং ধারায় নির্দেশনা রয়েছে। ৪৮নং ধারাটি সাধারণ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আর ৪৯ নং ধারাটি বিশেষভাবে পরিচালিত বা ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সাভার মডেল কলেজ ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় ৪৯ নং ধারা মোতাবেক যাথারীতি যথাবিধি এবং যথাসময়ে কমিটি গঠন করে যথারীতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অধ্যক্ষ মহোদয় আরো বলেন- নটরডেম কলেজসহ সারা দেশে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলছে ট্রাস্টের পরিচালনায়। যার বেশিরভাগই আংশিকভাবে এমপিও পাচ্ছে। এরকম বাস্তব দৃষ্টন্ত থাকা সত্ত্বেও বোর্ড কর্তৃক এমন নির্দেশ সম্বলিত চিঠি প্রেরণ একেবারেই অনভিপ্রেত।
সূত্রমতে আরও জানা যায় কলেজের অধ্যক্ষ মো. তৌহিদ হোসেন সাভার মডেল কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্ন ১৯৯৬ সাল থেকেই প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত আছেন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে শিক্ষামন্ত্রণালয় কর্তৃক জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০০২-এ এই প্রতিষ্ঠান ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবং ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সাভার উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কৃতিত্ব অর্জন করে। কলেজেরে অধ্যক্ষ তৌহিদ হোসেনের ব্যক্তিগত অর্জনও কম নয়। তিনি জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০০২-এ সাভার উপজেলার সেরা প্রিন্সিপাল হিসেবে সম্মাননা, শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য ২০১৭ সালে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী স্মৃতি পদক এবং ২০১৯ সালে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু এওয়ার্ড লাভ করেন। সাভারবাসীর প্রিয় এই প্রতিষ্ঠানে নৈতিকভাবে অধপতিত শিক্ষক রমজান আলীকে বহাল করার জন্য প্রশাসনকে ব্যবহার করে মোহাম্মদ হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে অস্থিতিশীল করার হীন ষড়যন্ত্র সাভারবাসীকে হতবাক করেছে। উল্লেখ্য রমজান আলী শিক্ষক হয়েও কাজী হিসেবে কর্মরত আর মোহাম্মদ হোসেন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি সাভারের ব্যাংক কলোনিতে অবস্থিত আইকন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত আছেন।