আর কে ওসমান আলী দিনাজপুর প্রতিনিধিঃদিনাজপুরে বিরামপুরে নেশাজাতীয় বিষাক্ত অ্যালকোহল খেয়ে নারীসহ ৬ ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকজন গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনায় জতিড় সন্দেহে পুলিশ ওই এলাকার ‘পল্লী হোমিও হল’ এর সত্ত্বাধিকারি ডা.আব্দুল মান্নানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। বুধবার ভোর রাতে পৌরশহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাহমুদপুর এলাকায় ৩ জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহরের হঠাৎপাড়া এলাকার ২ জন মারা যান। সর্বশেষ বুধবার বেলা ৩ টা ২০ মিনিটে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন, পৌরশহরের মাহমুদপুর এলাকার আনোয়ারুল ইসলামে ছেলে আব্দুল মতিন (২৭), তোজাম্মেল হোসেন এর ছেলে আজিজুল ইসলাম (৩৩) একই এলাকার সুলতান মাহমুদ এর ছেলে মহসিন আলী (৩৮)। হঠাৎপাড়া এলাকার শফিকুল ইসলাম (৪৫) ও তার স্ত্রী মঞ্জুয়ারা (৩৫)। শহরের ইসলাম পাড়া এলাকায় তাপস কুমার এর ছেলে অমৃত রায় (২৫)।
এ ছাড়াও আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন, জালাল উদ্দিন এর ছেলে আব্দুর সাত্তার (৩৭) শহিদুল ইসলামের ছেলে হৃদয় (২১), গোলাম মোস্তফার ছেলে জার্জেস শাহ (৩৮) আব্দুল আজিজ এর ছেলে সোহেল রানা (৩০)। তারা সাবায় পৌরশহরের মামুদপুর এলাকার বাসিন্দা।
মৃত মহসিন আলীর বাবা সুলতান মাহমুদ বলেন, আমার ছেলে শহরের পরিবহন শ্রমিকের কাজ করত। সে নিয়মিত অ্যালকোহল পান করত। সে ঈদের রাতেও অ্যালকোহল পান করে বাসায় আসলে পরিবারের লোকজন বকাঝকা করে। পরে মঙ্গলবার রাতে এলাকার বেশ কয়েক যুবকের সঙ্গে আবারো সে অ্যালকোহল পান করে বাড়িতে আসে। ভোর রাতে হঠাৎ অসুস্থ হলে তাকে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তার শরীরের অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
অসুস্থ সোহেল রানার ভাই মো.হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, এই এলাকার বেশ কিছু ছেলে অনেক দিন আগে থেকেই নিয়মিত বিষাক্ত অ্যালকোহল পান করত। গতকাল রাতে বেশ কয়েক বন্ধু মিলে বেশি পরিমানে বিষাক্ত অ্যালকোহল পান করার কারণে একই এলাকার তিন জন মারা যান। গুরুত্বর অসুস্থ রয়েছেন বেশ কয়েক জন।
বিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সোলায়মান হোসেন মেহেদি বলেন, বুধবার ভোরে বিষাক্ত অ্যালকোহল খেয়ে গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় ৫ ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। এদের মধ্যে তিনজন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে এবং বুধবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বামী-স্ত্রীসহ আরও দুই জন মারা যান। এনিয়ে অ্যালকোহল পানে মোট মৃত্যের সংখ্যা দাড়ালো ৬ জনে।
বিরামপুর পৌর মেয়র লিয়াকত আলী সরকার টুটুল বলেন, আমি বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অ্যালকোহল পানে স্বামী-স্ত্রীসহ মৃত্যুর ঘটনায় লাশগুলো উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গিয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সর্বশেষ ইসলাম পাড়া এলাকায় অমৃত রায় নামে আরো এক যুবক মারা যান।
বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.মনিরুজ্জামান মনির বলেন, অ্যালকোহল পানে স্বামী-স্ত্রীসহ উপজেলার ৬ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫ জনের লাশ উদ্ধার করে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হবে। রিপোর্ট আসলেই আসল ঘটনা জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তারা সবায় বিষাক্ত অ্যালকোহল খেয়ে মারা গিয়েছেন।
বিরামপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মিথুন সরকার বলেন, এক দিনে ৬ জনের মৃত্যু এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। ঘটনার সন্দেহে এক পল্লী চিকিৎসক কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।