আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের সাময়িক বরখাস্তকৃত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার(এসএসিএমও) মনোয়ার হোসেন জনির উপর সন্ত্রাসী হামলার হয়েছে।
হামলার ঘটনায় মনোয়ার হোসেন জনি নিজে বাদী হয়ে পাংশা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর তাজুল ইসলাম ও তার সহোদর ভাই আমিনসহ ১১জনকে এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৭জনকে আসামী করে পাংশা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১২, তাং ১৮/০৪/২০২১ইং, ধারাঃ ১৪৩/১৪৭/১৪৮/৪৪৮/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/ ৩৮৫/৫০৬/১১৪/৩৪ পেনাল কোড। মামলায় তাজুল ইসলাম(৩৩), আমিন ইসলাম(২৯) উভয় পিতা-রফিক খালাসি, হাবিল মন্ডল(৪০), মজনু শেখ(৩৩), শাহিন মন্ডল(৩৮), রাকিব মিয়া(২৩), সর্ব সাং-কুড়াপাড়া, রুবেল(২৮), সাবু ড্রাইভার(৩২), সাং-বিষ্ণুপুর, নাসির(৩০), রাকিব(২২), উভয় সাং-সত্যজিৎপুর, সাইদ(২২), সাং-নারায়নপুর, থানা-পাংশাসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৭জনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী মনোয়ার হোসেন জনি বলেন,, গত ১২/০৩/২০২১ তারিখে ১নং আসামী তাজুলসহ কতিপয় আসামী আমার মা মনোয়ারা বেগম এর মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জাফরীন ইন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মেহেদী হাসান ফরিদের নিকট ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। আমি উক্ত ম্যানেজার এবং আমার মাকে চাঁদা দিতে নিরুৎসাহিত করি। গত ১৩/০৩/২০২১ তারিখে রাজবাড়ী পুলিশ সুপার বরাবর ১নং আসামী তাজুলসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ম্যানেজার মেহেদী হাসানকে দিয়ে লিখিতভাবে দরখাস্ত দাখিল করাই। চাঁদা না পাইয়া আসামীগণ আমার উপর অতিশয় রাগান্বিত থাকে। অতঃপর চাঁদা আদায় করার একই উদ্দেশ্যে আসামীগণ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ৩টি বন্দুক, ২টি পিস্তল, একাধিক চাপাতি লোহার পাইপ, হকস্টিক ইত্যাদিতে সজ্জিত হয়ে গত ১৪/০৪/২০২১ দিবাগত রাত অনুমান ৭টা ৫০ মিনিটের সময় পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে অনধিকার প্রবেশ করে বন্দুক ও পিস্তলের নলের মুখে কর্তব্যরত ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীদের ভয় দেখিয়ে একপাশে নিয়ে ১নং আসামী তাজুল ইসলাম ওরফে তাইজেল আমার নিকট পূর্বে দাবীকৃত ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। আমি চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করামাত্র ১নং আসামী অন্যান্য আসামীকে আমাকে খুন করার হুকুম দেয়। হুকুম পাওয়ামাত্র ৫নং আসামী শাহিন তার হাতে থাকা ধারালো চাপাতি দিয়ে খুন করার জন্য আমার মাথা লক্ষ্য করে কোপ মারলে আমি ডান হাত দিয়ে ঠেকালে উক্ত কোপ ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী ও তর্জনী আঙ্গুলের মাঝখানে ও হাতের তালুতে লেগে মারাত্মক রক্তাক্ত গভীর কাটা জখম হয়। যাহাতে সেলাই দেয়া হয়েছে। ২নং আসামী আমিন ইসলাম তার হাতে থাকা ধারালো চাপাতি দিয়ে খুন করার উদ্দেশ্যে আমার মাথা লক্ষ্য করে কোপ মারলে আমি বাম হাত দিয়ে ঠেকালে উক্ত কোপ বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী ও তর্জনী আঙ্গুলের মাঝখানে ও হাতের তালুতে লেগে মারাত্মক গভীর কাটা জখম হয়। ৭নং আসামী রুবেল তার হাতে থাকা বন্দুক দিয়ে খুন করার জন্য আমার মাথা লক্ষ্য করে গুলি করতে উদ্যত হলে আমি বন্দুকের নল চেপে ধরলে উক্ত গুলি আমার ডান হাতের চতুর্থ আঙ্গুল ভেদ করে বের হয়ে যায় এবং হাতভাঙ্গা, কাটা ছেড়া রক্তাক্ত ও পোড়া জখম হয়। ৩নং আসামী হাবিল তার হাতে থাকা বন্দুকের বাট দিয়ে আমার মাথা লক্ষ্য করে খুন করা জন্য বারি মারলে উক্ত বারি আমার মাথার চাঁদিতে লেগে গভীর রক্তাক্ত কাটা ও ফাটা জখম হয়। ৪নং আসামী মজনু তার হাতে থাকা থাকা লোহার পাইপ দিয়ে খুন করার জন্য আমার মাথায় বারি মারলে আমার মাথার বাম পাশে লেগে গভীর রক্তাক্ত কাটা ও ফাটা জখম হয়। ১১নং আসামী সাইদ তার হাতে থাকা লোহার পাইপ দিয়ে আমার বাম পায়ের হাঁটুতে একাধিক আঘাত করে গুরুতর হাড়ভাঙ্গা ও নীলাফুলা জখম করে। আমি মাটিতে পড়ে গেলে ১নং আসামী তাইজেল আমাকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু করার জন্য আসামী শাহিন, মজনু, সাইদ ও ১০নং আসামী রাকিবকে দিয়ে অমার পা চেপে ধরে ধারালো খুর দিয়ে ডান পায়ের পাতার টাকনুগিরার পিছনে মোটা রগ কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা এবং গভীর রক্তাক্ত কাটা জখম হয়। আমার উক্ত পা পঙ্গু হয়ে গেছে এবং উক্ত স্থানে সেলাই করা হয়েছে। ১নং আসামী তাইজেল পুনরায় তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে আমার বাম পায়ের হাঁটুর নিচে গুলি করলে উক্ত গুলি বাম পায়ের হাঁটুর মাংশপেশী ভেদ করে বের হয়ে যায় এবং গভীর ছিদ্রযুক্ত রক্তাক্ত কাটা জখম হয়। ৬নং আসামী রাকিব মিয়া আমাকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু করার জন্য তার হাতে থাকা ধারালো চাপাতি দিয়ে আমার বাম পায়ের পিছনের দিকের গোড়ালির মোটা রগে কোপ মেরে গুরুতর রক্তাক্ত কাটা জখম করে। আসামী হাবিল, মজনু, নাসির, রাকিব, বন্দুকের বাট এবং লোহার পাইপ দিয়ে আমার দুই পা দুই হাতে উপর্যপরি পিটিয়ে নীলাফোলা কালসেটে জখম করে। হাসপাতালে জরুরী বিভাগে কর্মরত উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ও স্বাক্ষী আমার স্ত্রী কাশপিয়া জেসমিন একই পদে কর্মরত আসাদুজ্জামান সুমন কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার মাকসুদা ইয়াসমিন এবং সরকারী এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার লিটন হোসেন, চিকিৎসাগ্রহণকারী রোগী শাহেদ আলী, অন্যান্য রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজন ও হাসপাতালের অন্যান্য কর্মচারী গুলির ও বিভৎস ঘটনার ফলে ভিত সন্ত্রস্ত হয়ে শোর চিৎকার করতে থাকলে এবং আশে পাশের লোকজন এগিয়ে আসলে আসামীগণ বন্দুক ও পিস্তল উচু করে জনমনে ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে হাসপাতালের প্রধান গেট দিয়ে বের হয়ে ডান পাশের পুকুর পাড় দিয়ে দ্রুত পশ্চিম দিকে চলে যায়।
এদিকে, মনোয়ার হোসেন জনির উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করার ঘটনায় পাংশা মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামী কুড়াপাড়া গ্রামের মজনু শেখ ও রাকিব মিয়াকে থানা পুলিশ গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।
এই বিভাগের আরও খবর....