প্রতিবন্ধীত্ব বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে প্রতিবন্ধীত্বের উপর বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। খানার আয় ও ব্যয় জরীপ ২০১০ অনুযায়ী, অক্ষমতার হার মোট জনগোষ্ঠির ৯.১ শতাংশ, যদিও ২০১১ সালের জাতীয় আদম শুমারী অনুযায়ী এ হার শতকরা ১.৭ শতাংশ।
বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান উপলব্ধি হলো এই যে, প্রতিবন্ধী শিশু মূল যে প্রতিবন্ধকতার সন্মূখীন হয় সেটা তার বৈকল্য নয়, বরং সেটা হলো ব্যাপক বৈষম্য এবং কুসংস্কার। বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের মূলে রয়েছে পরিবার, সমাজ এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য। সমাজের সর্বস্তরে এরূপ একটি বিশ্বাস আছে যে, প্রতিবন্ধীত্ব একটি অভিশাপ এবং এটি পাপ কাজের শাস্তি যা প্রতিবন্ধীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ যত্ম, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা এবং অংশগ্রহণের সুযোগকে প্রভাবিত করে। প্রতিবন্ধী শিশুরা স্বাস্থ্যসেবা অথবা বিদ্যালয়ে যাওয়ার সবচেয়ে কম সুযোগ পায়। বিশেষ করে তাদেরকে লুকিয়ে রাখলে কিংবা প্রতিষ্ঠানে দিলে অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ সকল গোষ্ঠির মধ্যে তারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতন, অপব্যবহার, শোষণ এবং অবহেলার শিকার হয়। লিঙ্গও একটি গুরত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় কারন ছেলের তুলনায় প্রতিবন্ধী মেয়েরা কম খাদ্য ও যত্ন পায়। এ ধরনের বাচ্চাদের সম্পর্কে আরোও বেশি জানার আগ্রহ থেকে অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি বিশেষ স্কুল করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব মোহম্মাদ আবু হেনা ও তার সহধর্মীনী মিসেস ফরিদা হেনা।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তীতে ২০১৮ সালের পশ্চিমের জেলা রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুরে এতিম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ‘আহম্মদ আলী মোল্লা মেমোরিয়াল এতিম ডিসএবল্ড স্কুল এন্ড কলেজ’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এই দম্পতি। যেখানে তাদের মোটামুটি স্বাভাবিক জীবন-যাপনের জন্য বিশেষভাবে পড়াশুনা করানো হয়। এব্যাপারে জনাব মোহম্মদ আবু হেনা বলেন, একটি ভিন্ন রকমের চিন্তা ধারা থেকে ২০১৮ সালে স্থানীয় কয়েকজনকে সাথে নিয়ে ‘আহম্মদ আলী মোল্লা মেমোরিয়াল ডিসএবল্ড স্কুল এন্ড কলেজ’ নামে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করি।
বাংলাদেশে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ হচ্ছে। তারপরেও অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতার অভাব এখনো রয়ে গেছে। অনেক অভিভাবক এই ধরনের বাচ্চাকে বাইরে বের করতেই অস্বস্তি বোধ করনে। তবে এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে এই অবস্থা ধীরে ধীরে পরিবর্তন হবে বলেও তিনি মনে করেন। তিনি আরও জানান, স্কুলটির পেছনে কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নেই বরং অনেক দরিদ্র ও এতিম বাচ্চারা বিনা বেতনে, বিনা খরচে এখানে শিক্ষা, সেবা ও প্রশিক্ষণ লাভ করছে। বর্তমানে স্কুলটিতে রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া এবং পাবনা এই তিন জেলার প্রায় তিন শতাধিক এতিম ও প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষা সেবার সুযোগ সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। ওছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আব্দুল মাজেদ, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সাবেক মহাপরিচালক ড. নেহাল উদ্দিন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিউটের (রিসোর্স) সাবেক মহাপরিচালক ড. সিরাজুল ইসলাম, রাজবাড়ী ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মতিন মিয়া ও পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরিদ হাসান ওদুদ স্কুলটির উপদেষ্টা মণ্ডলীর তালিকায় রয়েছেন।
এব্যাপারে পাংশা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমরা বিশ্বাস করি যে, প্রতিষ্ঠান হিসাবে ‘আহম্মদ আলী মোল্লা মেমোরিয়াল এতিম ডিসএবল্ড স্কুল এন্ড কলেজ’এ তারা নিজেরা অন্তর্ভূক্তিমূলক হলেই কেবল প্রতিবন্ধীদের নিয়ে তাদের কার্যক্রম সফল হবে।
স্কুলটি সার্বিক পরিচালনা করছেন কাজল মাহমুদ। প্রায় তিন শতাধিক এতিম প্রতিবন্ধী ছাত্রছাতী ও ২১ জন শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়ে স্কুলটি পরিচালিত হচ্ছে। এ লক্ষে সবার সহোযোগীতা একান্তকাম্য বলেও অভিহিত করেন তিনি।
এই বিভাগের আরও খবর....